শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র মিলে শিল্প খাতে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে চলমান অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পতিত সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র জড়িত হয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করছে।’
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যকম নিয়ে আয়োজিত ‘নাগরিক উৎসবে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মিলনায়তনে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা সমস্যা তৈরি করছেন না। তাঁদের দিয়ে সমস্যা তৈরি করানো হচ্ছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। যারা দেশের বাইরে থেকে অস্থিরতা তৈরির ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন। এ পর্যন্ত চারটি জাতীয় নির্বাচন দেশে–বিদেশে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত তিনটি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কীভাবে নির্বাচনকে নষ্ট করতে হয়, তা নিয়ে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে যেতে হবে না। এই নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক। তার পরিণতি ইতিমধ্যে দেখা গেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ভোট ছিল একটি উৎসব। কিন্তু গত ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন তা অংশগ্রহণমূলক হয়। অংশগ্রহণ মানে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ভোটারদেরও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হয়।’
সাখাওয়াত আশা করেন, আগামী নির্বাচন যখনই হোক, তা একটি ব্যতিক্রমী নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, ‘আশা করি, আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে, তাতে যাঁরা অংশ নেবেন, তারা নিশ্চয় গত তিনটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। যদি শিক্ষা না নেন, তাহলে তা দুর্ভাগ্যজনক।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাখাওয়াত ভোটার হিসেবে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে কারও ভোটাধিকার কেউ কেড়ে নিতে না পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুজন সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সবার দায় আছে। এ ক্ষেত্রে দায় বেশি রাজনীতিবিদদের।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন, সেগুলো তারা বাস্তবায়ন করেননি।এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। এটি চাপিয়ে দিলে হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ থেকেই সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে নাগরিকেরা সোচ্চার না হলে কোনো কিছুই সফল হবে না। এই রাষ্ট্রের মালিক হলো জনগণ।’
১৭ ডিসেম্বর আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবাই চায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসুক।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যাতে আর কখনো বাতিল না হয়, সে জন্য সবাইকে ‘ওয়াচ ডগের ভূমিকা’ পালন করতে হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ